
সিএনটিভি ডেস্কঃ
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করা এবং তার সঙ্গে সাংবাদিকদের বাহাস ঘিরে বেসরকারি টেলিভিশন দীপ্ত টিভির বুলেটিন বন্ধ এবং তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সচিবালয়ে সোমবারের ওই ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার নিজেদের স্ক্রলে সংবাদ সম্প্রচার বন্ধের খবর দেয় দীপ্ত টিভি। দুপুর ২টার পর থেকে পাঁচটি বুলেটিন প্রচার করেনি স্টেশনটি। রাত ১১টায় আবার সংবাদে ফেরে তারা। একইসঙ্গে টেলিভিশনটির সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট মিজানুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বীকে বরখাস্ত করার কারণ হিসেবে সংস্কৃতি উপদেষ্টার ব্রিফিং নিয়ে করা অভিযোগের কথা এটিএন বাংলা কর্তৃপক্ষ বললেও বরখাস্তের চিঠিতে অতীতে ‘অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি’ কাজের উদাহরণ টানা হয়েছে।
চ্যানেল আই অনলাইনের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে ‘পেশাদারিত্ব প্রদর্শন না করার অভিযোগের’ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক অর্থাৎ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল বাসারকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেনি সরকার। ‘গণহত্যার পক্ষে’ প্রশ্ন করায় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ নিজেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
টেলিভিশনটির সংবাদকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয় নিয়েও সেখানে সবিস্তারে আলোচনা হওয়ার হওয়ার কথা তুলে ধরেন তারা।
এ বৈঠকের পরে রাত ১১টায় আবারও বুলেটিন সম্প্রচার শুরু হয়।
বিষয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আজকে সারাদিন আমি বিশ্রামে ছিলাম। আপনার কাছেই প্রথম এটা জানলাম। আমি বা আমার মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে একদমই ওয়াকিবহাল না। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোই আসলে বলতে পারবে তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ কী”।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরে ‘আলী’ নামে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের যাওয়া উপলক্ষে সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি এবং ওই চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে নানা বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।
সেখানে সাংবাদিকদের থেকে প্রশ্ন আসে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে আয়োজিত বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার ইউনেস্কো স্বীকৃতি, শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মুখাকৃতির আদলে মুখোশ এবং জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানের নিহতের সংখ্যা নিয়ে।
পাল্টাপাল্টি কথায় প্রশ্নোত্তরের এই পর্ব অনেকটা বাহাসে পরিণত হয়। শুরুতে বসে উত্তর দিলেও এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েও কথা বলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
বিষয়টি চাউর হলে ওই সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্ন ঘিরে ওই তিন টেলিভিশন সাংবাদিকের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের ছবিসহ পোস্ট করা হয় ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স-জেআরএ’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজে।
তিন সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে করা ওই পোস্টে বলা হয়, “আজকের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রেস কনফারেন্স এ যারা ফ্যাসিস্ট এর পক্ষে কথা বলেছে…”
মঙ্গলবার দুপুরে ওই পেইজ থেকে আরেকটি পোস্ট করে বলা হয়, “এই তিন সাংবাদিক এর বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে ‘মার্চ টু দীপ্ত টিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা‘।”
এর মধ্যে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ এবং তিন সাংবাদিকে বরখাস্ত বা অব্যাহতি দেওয়ার খবর আসে। জেআরএ এর ফেইসবুক পেইজেও বরখাস্ত বা অব্যাহতির চিঠি প্রকাশ করা হয়।
পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, এক সাংবাদিক গণহত্যার পক্ষ নিয়ে প্রশ্ন করার প্রেক্ষিতে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে, সরকার এখানে কিছু বলেনি, কাউকে কলও দেওয়া হয়নি।
সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে গণমাধ্যমের বাস্তবতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “মন্ত্রিত্বের ৬ মাসে কাউকে আমরা কল দেইনি। দীপ্ত টিভির সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং সংবাদ বিভাগ বন্ধ করা হয়েছে। এখন মানুষ ভাববে- এটা সরকার করেছে’