পারভেজ হত্যায় ‘দোষ স্বীকার করে’ কামালের জবানবন্দি কামাল প্রাইমএশিয়ার শিক্ষার্থী নন, মামলার এজাহারেও তার নাম নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. আল কামাল শেখ আদালতে ‘দোষ স্বীকার করে’ জবানবন্দি দিয়েছেন।

রিমান্ড চলাকালে জবানবন্দি দিতে চাইলে বুধবার তাকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক এ কে এম মঈন উদ্দিন।

এরপর ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমান জবানবন্দি নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বনানী থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই মোক্তার হোসেন এ তথ্য দিয়েছেন।

পারভেজকে হত্যার পরদিন রোববার মধ্যরাতে বনানী থানা পুলিশ মো. আল কামাল শেখ (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও আল আমিন সানি (১৯) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা কেউ ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী নন, মামলার এজাহারেও তাদের নাম নেই। সোমবার তাদের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয় আদালত।

এরপর সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস এলাকায় মামার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মামলা পাঁচ নম্বর আসামি হৃদয় মিয়াজীকে। বুধবার গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার হন মামলার এক নম্বর আসামি মেহরাজ ইসলাম। এদিনই মামলার তিন নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সব মিলিয়ে মামলাটিতে ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ঢাকার বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শনিবার টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজ ছুরিকাঘাতে খুন হন। পরদিন সকালে তার চাচাত ভাই হুমায়ুন কবীর আটজনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, মেহরাজ ও তার সঙ্গীরা লাঠিসোঁটা, ছুরি-চাকু ও চাপাতি হাতে পারভেজের ওপর হামলা চালায়।

এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ১৯ এপ্রিল বিকালে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে একটি পুরি-সিঙ্গারার দোকানে খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করছিলেন পারভেজ।সেসময় তাদের পেছনে দুজন অন্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল। একপর্যায়ে মামলার এক নম্বর আসামি মেহরাজসহ তিনজন এসে পারভেজের কাছে হাসাহাসির কারণ জানতে চান। বিষয়টি নিয়ে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, “পরে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক এসে দুই পক্ষকেই প্রক্টরের রুমে ডেকে নিয়ে মীমাংসা করে দিলে মেহরাজসহ তার সঙ্গীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভবন থেকে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরে আসামিরা লাঠিসোঁটা, ছুরি-চাকু ও চাপাতি হাতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ধাওয়া করে পারভেজ ও তার বন্ধু তারিকুল ইসলামকে মারধর এবং পারভেজের বুকে ছুরিকাঘাত করে।”

এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, “মেহরাজ ইসলাম তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তার বুকের বাম পাশে সজোরে আঘাত করে।”

মামলার আসামিরা হলেন- মেহরাজ ইসলাম (২০), আবু জর গিফারী পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজী (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। এদের ছাড়াও নাম না দিয়ে আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার হৃদয় মিয়াজী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা ইউনিটের যুগ্ম সদস্য সচিব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষারও এ হত্যা মামলার আসামি।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পারভেজকে নিজেদের কর্মী দাবি করে এ হত্যাকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানীর কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ করে ছাত্রদল।

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিজেদের ফেইসবুক পেইজে ছাত্রদলের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এই ঘটনায় তাদের নেতারা জড়িত নন; ছাত্রদল মিথ্যাচার করছে।

Facebook
WhatsApp
Email
Pinterest
Telegram