সিএনটিভি ডেস্কঃ
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবশেষ মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে বিপুল ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
সেই প্রতিবেদনে, তোফাজ্জল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকায় বনানী, গুলশান, মিরপুর, দিয়াবাড়ি, পূর্বাচল, ‘বিসিএস অ্যাডমিন হাউজিং সোসাইটি’ ফ্ল্যাট ও প্লট, গ্রামের বাড়ি পিরোপজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় বাড়ি ও জমি, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ফ্ল্যাট থাকার তথ্য এসেছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, অনুসন্ধানের জন্য উপপরিচালক মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক নাছরুল্লাহ হোসাইন, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা ও উপসহকারী পরিচালক আফিয়া খাতুন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব থাকাকালে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পান জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল। ২০২৩ সালের ৪ জুলাই চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে একই পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় সরকার। এরপর গত ২৬ জুন তার চুক্তির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়। তবে একই বছরের ৭ আগস্ট তার নিয়োগ বাতিল করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
অতীতে তোফাজ্জল হোসেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ও সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দুদক যে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে, সংস্থার কর্মকর্তা বলেছেন সেখানে তোফাজ্জল হোসেন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় তার পৈত্রিক বাড়িতে একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করার তথ্য রয়েছে। এলাকায় অনেক জমির মালিক তিনি। এছাড়া ঢাকার মিরপুর-২ এ তার নামে একটি বাড়ি আছে এবং ‘প্রত্যাশা ভবন’ নামের একটি বাড়ি তিনি স্ত্রীর বাবার নামে করে দিয়েছেন বলে জানা যায়।
ঢাকার দিয়াবাড়িতে তোফাজ্জলের নামে একটি প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে, যেটি সড়ক বিভাগ থেকে পাওয়া বলে অভিযোগ আছে। আরও জানা গেছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এবং ‘বিসিএস অ্যাডমিন হাউজিং সোসাইটি’ এ তার নামে প্লট আছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তার সুপারিশেই পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন নির্ধারিত হত। ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ তাকে দুবাইয়ে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তোফাজ্জলের ভাই জাকির হোসেন মিয়া কানাডায় স্থায়ী। তার নামে সেখানে জাকির বাড়ি কিনেছেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে শোনা যায়। অস্ট্রেলিয়ায়ও তার নামে ফ্ল্যাট থাকার কথা শোনা যায়, যেখানে তার সন্তানরা বসবাস করেন। স্ত্রী আফরোজা খান ও সন্তানদের নামে ঢাকার বনানী ও গুলশান এলকায় তিনি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
সাবেক এই মুখ্য সচিবের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগটি হল—নিজের বাবার নামে একটি ‘অস্তিত্বহীন’ এতিমখানা দেখিয়ে সরকারি ‘অর্থ আত্মসাৎ’। বছর শুরুর আগে বরাদ্দ নেওয়া হলেও তখন এটির নিবন্ধন ছিল না। এতিমখানাটি ২০২৪ সালের জুনে নিবন্ধিত হয়।
প্রতিবেদনে স্থানীয় সমাজসেবা কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে ‘নিয়ম উপেক্ষা’ করে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে এতিমখানাটি নিবন্ধন দেওয়া হয়। এই এতিমখানার সভাপতি হিসেবে আছেন তোফাজ্জলের বড় ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন মিয়া। স্থানীয়দের মতে, যেখানে এতিমখানা দেখানো হয়েছে, সেটি একটি মাদ্রাসার ভবন এবং সেখানে বসবাসকারী ছাত্ররা কেউই ‘এতিম নয়’।
গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার। তিনি আত্মগোপনে থাকায় মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিবদের মধ্যে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ ও নজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হয়েছেন। আহমেদ কায়কাউস দেশের বাইরে আছেন বলে খবর এসেছে।