সীতাকুণ্ডে ছুরি শিম চাষে লাভবান কৃষক এম রহমান নায়েম।

 

মোঃ সালেক উদ্দিন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।

শিম আমাদের দেশে শীতকালীন একটি প্রধান সবজি। অনেকে সবজি হিসেবে শিমকে খুব পছন্দ করে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শিম উৎপাদনের দিক থেকে বেশ পরিচিত। এ অঞ্চলের উৎপাদিত শিম সরবরাহ করা হয় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে।

সমভূমিতে যতদূর চোখ যায় ফুটে আছে ছুরি শিমের ফুল। কোথাও থোকা থোকা ঝুলছে সবুজ রঙের শিম। আবার কোথাও থোকা থেকে সদ্য ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের কেউ কেউ বাজারে বিক্রির জন্য শিম তুলছেন। আবার কেউ শিমের লতা পরিচর্যায় ব্যস্ত। এমন চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ৪ নং মুরাদপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের উকিলপাড়া সমভূমিতে। ছুরি জাতের এ শিম গ্রীষ্মকালে লাগানো হয় বলে একে গ্রীষ্মকালীন শিম বলা হয়।
জানা গেছে, সমভূমিতে শিম আবাদ করে সফলতা পেয়েছেন শত শত কৃষক। উপজেলার ছোটদারোগার হাট থেকে শুরু করে ছলিমপুর পর্যন্ত চার শতাধিক স্পটে সমভূমি ও পাহাড়জুড়ে এ শিম চাষ করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন জাতের শিমের উৎপাদন করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করছেন চাষিরা।
উকিলপাড়া এলাকার কৃষক এম রহমান নায়েম বলেন, ‘আমরা সমভূমিতে নানা রকম কৃষি উৎপাদন শুরু করি। নিজস্ব ভূমি হওয়াতে ভূমি উন্নয়ন কর ছাড়া কাউকে টাকা দেওয়া লাগে না। আছে শুধু সেচ দেওয়ার চিন্তা।

সীতাকুণ্ড উপজেলা শিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। সীতাকুণ্ডের শীতকালীন শিম বিশেষ করে ছুরি, লইট্টা, বাঁটা শিমের চাহিদা বেশি। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন শিমও সুস্বাদু ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর চাষ বাড়ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে সীতাকুণ্ড উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ হয়েছিল ২৮ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর তা বেড়ে ৩০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

কৃষক এম রহমান নায়েম বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষ শতবছর আগেই থেকেই ধরে সমভূমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে আসছি। এ শিম ওঠার শুরুতে প্রতি কেজি বিক্রি করেছি ১৬০-১৭০ টাকা। এখনো ৫০ টাকা দরে শিম বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে এ শিম নিয়ে যাচ্ছেন।’

স্থানীয়রা জানান, সীতাকুণ্ডের সমভূমিতে শিম চাষ হয়। সমতল হওয়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা কম। তবে বর্ষায় সমতলে অতিবৃষ্টিতে পানি জমে শিমের লতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু পাহাড়ে পানি জমে থাকে না। ফলে শিম গাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। পাহাড়ে এ শিমের চাষ বাড়তে থাকায় অনাবাদি জমির পরিমাণও কমছে। ছুরি শিমের ফলন শীতকালীন শিমের চেয়েও দীর্ঘসময় ধরে পাওয়া যায়। ফলে এ শিমে লাভও বেশি।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সীতাকুণ্ডে গ্রীষ্মকালীন ছুরি শিম চাষ করেছেন প্রায় ৩শ কৃষক। মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, সৈয়দপুর, বড় দারগার হাট সমভূমিতে বেশির ভাগ এলাকায় ছুরি শিম চাষ হয়েছে। এ ছাড়া বাঁশবাড়িয়া, সৈয়দপুর, বারৈয়ারঢালা ও সীতাকুণ্ড পৌর সদরেও রূপবান ছুরি চাষ হয়েছে।

ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজন ঘোষ বলেন, ‘প্রতি হাটে (সপ্তাহে দুদিন) ইউনিয়ন থেকে অন্তত ১৫ টন শিম বিক্রি করেন কৃষকেরা। এখন ১৫ টন শিমের মূল্য ৭-৮ লাখ টাকা। আমরা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিই। ফুল আসার পর সেগুলো ধরে রাখার জন্য ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, তার পরামর্শ দেই। সমভূমিতে গিয়ে বিভিন্ন সময় তদারকি করি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এই শিমে দীর্ঘসময় ফলন হয়। শীতকালীন শিমের চেয়েও দাম বেশি। ফলে কৃষকেরা গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। প্রতি বছর বাড়ছে শিম চাষ। শীতকালীন শিমের মতো ছুরিশিমও খুব সুস্বাদু। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে এর সুনাম আছে।

Facebook
WhatsApp
Email
Pinterest
Telegram