
সিএনটিভি ডেস্কঃ
দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক আট কোটি শ্রমিকের স্বীকৃতি ও আইনি সুরক্ষায় যেমন জোর দেওয়া হয়েছে, তেমনি নিরাপদ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত আর কাজের অধিকার ও সুযোগ তৈরি এবং মজুরি-ন্যায্য হিস্যার সুপারিশ এসেছে শ্রম সংস্কার কমিশন থেকে।
শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রেও সংস্কারের প্রস্তাব করে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিতে জাতীয় মজুরি কমিশন গঠন করতেও বলেছে কমিশন।
সেই সঙ্গে শ্রম অসন্তোষ দূর করতে রপ্তানি খাতের শিল্পের শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন পরিশোধ করার মত অর্থ নিয়ে একটি তহবিল গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
রিকশাওয়ালা, দিন মজুর, জেলে, হকার, গৃহকর্মী বা আয়াদের পাশাপাশি প্রবাসী শ্রমিকদেরও আইনি স্বীকৃতি দিতে চায় কমিশন।
এসব সুপারিশ সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করলে দেশের শ্রম পরিবেশ উন্নত হবে বলে মনে করছেন অংশীজনদের একজন।
তবে এক্ষেত্রে সরকারকে শ্রমিক-মালিক সবার স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ তার।
এগুলোর চেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে, প্রয়োজনে নতুন আইন তৈরি করতে অন্তবর্তীকালীন সরকার কতটুকু সময় পাবে।
দুইশ’র বেশি শ্রেণির শ্রমিক, ছোটো ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ৪৫৮ পৃষ্টার প্রতিবেদন সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
শ্রম জগতের রূপান্তর-রূপরেখা; শ্রমিকের অধিকার, সুসমন্বিত শিল্প সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে শ্রমিকের অধিকার, আইনি সুরক্ষা ও ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে মোটা দাগে চারটি ভাগে ২৫টি মৌলিক সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
এতে গুরুত্ব পেয়েছে শ্রমিকের কাজ ও পেশার স্বীকৃতি, কাজের অধিকার, সুযোগ, দক্ষতা, স্থায়িত্ব ও নিশ্চয়তা, মজুরি ও ন্যায্য হিস্যা, নিরাপদ-স্বাস্থ্যসম্মত কর্ম পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ সংগঠনের অধিকার, অংশগ্রহণ, প্রতিনিধিত্ব ও যৌথ দরকষাকষি, শিল্প অসন্তোষ ও বিরোধ নিষ্পত্তি, ন্যায় বিচার, সমতা, বৈষম্য ও অন্তভূক্তি, শিশু শ্রম, কিশোর শ্রমিক ও জবরদস্তিমূলক শ্রম।
রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ১১টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে শ্রম বিষয়ক এ কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয় দেশে আট কোটি শ্রমিক রয়েছেন, যাদের ৯৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক।
এবারই প্রথম সব খাতের শ্রমজীবী মানুষকে সার্বজনীন আইনের আওতায় আনা ও তাদের স্বীকৃতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে কমিশন তুলে ধরেছে।
সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ফতুল্লা অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত যত শ্রম আইন ও বিধিমালা হয়েছে, তাতে সেবা খাতের শ্রমিকদের বিষয়ে কিছুই ছিল না। এই প্রথম সব শ্রমিকের স্বীকৃতি ও আইনি সুরক্ষা দিতে বলা হয়েছে।
‘‘প্রস্তাবনা তৈরিতে উদ্যোক্তা, শ্রমিক, একাডেমিশিয়ান, সাংবাদিক ও আইনজীবীরা একমত হয়ে সব প্রস্তাব দিতে পেরেছি, যেটা আমাদের কাছেও স্বস্তিদায়ক মনে হয়েছে। শ্রমিক ইস্যুতে ১০ জন বসলে একমতে পৌঁছানো সম্ভব হয় না বেশির ভাগ সময়ে। দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের শ্রম বাজারে নিয়ে কাজ করার জন্য একটি গাইডলাইন হতে পারবে আমাদের প্রস্তাবনা।’’
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।